ভিটামিন-এ এর অভাব জনিত লক্ষণ | ভিটামিন এ জাতীয় খাবার | ভিটামিন এ এর অভাবজনিত রোগ | ভিটামিন-এ এর উপকারিতা | ভিটামিন-এ এর কাজ কি | ভিটামিন এ এর রাসায়নিক নাম কি |

ভিটামিন-এ এর রাসায়নিক নাম,অভাব  জনিত লক্ষণ,উপকারিতা,কাজ

ভিটামিন-এ

রাসায়নিক নাম-রেটিনল

দ্রাব্যতা-ফ্যাটে

কাজ-রক্তে ক্যালসিয়ামের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করা। 

উৎস-গাজর,কুমড়ো, পাকা পেঁপে, বিভিন্ন মাংসাশী প্রাণীর যকৃত।

অভাবজনিত রোগ- রাতকানা।

ভিটামিন-এ এর উপকারিতা

ভিটামিন এ আমাদের শরীরের জন্য কত জরুরী এবং ভিটামিন এর অভাব হলে আমাদের শরীরে কি কি অভাব জনিত লক্ষণ দেখা যেতে পারে আমরা আজকের এই পোস্টটিতে সেই সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।

ভিটামিন- এ অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি ভিটামিন আমাদের শরীরের জন্য। এই ভিটামিনটি আমাদের দৃষ্টি শক্তি গঠনের জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ আমাদের চোখের ভিতর যে রেটিনা আছে তার রড এবং কোন নামক দুটি কোষ থাকে। এই দুটি কোষের মধ্যে থাকা রড কোষটি আমাদের অল্প আলোতে দেখতে সাহায্য করে।

এই রড কোষ যাতে স্বাভাবিকভাবে ক্রিয়া করে এর জন্য ভিটামিন-এ এর গুরুত্ব অপরিসীম সুতরাং যদি কোন ব্যক্তির শরীরে ভিটামিন এ এর অভাব হয় তাহলে তার শরীরে রড কোষ সঠিকভাবে ক্রিয়া করে না তার ফলে কিন্তু তার দৃষ্টি জনিত সমস্যা বিভিন্ন রকমভাবে হতে পারে।

ভিটামিন এ এর পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা হলো রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা অর্থাৎ ইমিউনিটি সিস্টেম থাকে সেটি আমাদের দেহের বাইরে থেকে দেহের মধ্যে প্রবেশ করা রোগজীবাণুর [যেমন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস]  বিরুদ্ধে আমাদের দেহ বিভিন্ন ধরনের শ্বেত রক্তকণিকা সৃষ্টি করে যার মাধ্যমে এই সমস্ত বাইরে থেকে প্রবেশ করা রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে আমাদের দেহের মধ্যে একটি সুরক্ষা বা প্রোটেকশন সৃষ্টি করে। এই শ্বেত রক্তকণিকার বিভিন্ন উপাদানগুলোর বিকাশের জন্য ভিটামিন-এ  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ভিটামিন-এ এর তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো আমাদের ত্বকের স্বাভাবিক বিকাশ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা। আমাদের ত্বকে থাকা বিভিন্ন রকমের কোষের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য ভিটামিন-এ অপরিহার্য।

ভিটামিন-এ এর শেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো আমাদের প্রজনন তন্ত্রের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশের করা।

ভিটামিন-এ এর অভাব জনিত লক্ষণ

ভিটামিন এ এর অভাব জনিত লক্ষণগুলি জানার আগে আমাদের জেনে রাখা উচিত ভিটামিন এ এর অভাব হওয়ার সম্ভাবনা কাদের সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ  যারা গর্ভবতী মহিলা,শিশুদের স্তন্যদুগ্ধ পান করান এমন মহিলা এবং শিশুদের ক্ষেত্রে ভিটামিন এ এর  পরিমাণ স্বল্পতা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

ভিটামিন এ এর অভাব জনিত লক্ষণগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ টি হলো ত্বক শুকনো হয়ে যাওয়া।যেহেতু আমাদের ত্বকের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য ভিটামিন এ অপরিহার্য তাই আমাদের দেহে ভিটামিন এ এর অভাব হলে দেহের ত্বকের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশ হয় না তার ফলে দেহের ত্বক শুষ্ক এবং অনেক খসখসে হয়ে যায়।

ভিটামিন এ এর অভাব জনিত লক্ষণগুলির মধ্যে পরবর্তী লক্ষণ টি হলো ড্রাই আই সিনড্রোম (চোখের শুষ্কতা) অর্থাৎ একজন ব্যক্তি চোখে শুকনো ভাব বা অস্বস্তির জন্য অসুবিধা অনুভব করে কারণ চোখে যথেষ্ট জল তৈরী হয় না বা দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে যায়। আমাদের চোখের একদম বাইরে যে আস্তরণ টি থাকে সেটিকে বলা হয় কনজাংটিভা। এই কনজাংটিভার উপরে একটি অশ্রু স্তর থাকে এটি আমাদের চোখের মধ্যে বিভিন্ন রকম জীবাণু প্রবেশে করতে বাধা দেয়।যদি কোনো কারণে কোন ব্যক্তির দেহের ভিটামিন এর অভাব হয় সেক্ষেত্রে কিন্তু এই অশ্রু বা tears এর স্বাভাবিক উৎপাদন কমে যায় এবং তার ফলে ড্রাই আই সিনড্রোম (চোখের শুষ্কতা) দেখা যেতে পারে।

ভিটামিন এ এর অভাব জনিত আর একটি লক্ষণ হলো Night Blindness বা রাতকানা রোগ। আমরা জানি, আমাদের চোখের ভিতর যে রেটিনা আছে তার মধ্যে দুটি কোষ থাকে রড কোষ এবং কোন কোষ।কোন কোষ আমাদের বেশি আলো এবং রড কোষ আমাদের কম আলোয় দেখতে সাহায্য করে।   
এই রড কোষের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন এ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনো ব্যক্তির ভিটামিন এ জনিত কোনো সমস্যা হয় অর্থাৎ দেহে ভিটামিন এ এর অভাব হয় সেক্ষেত্রে রড কোষ কম পরিমাণের তৈরি হয় তার ফলে সেই ব্যক্তির Night Blindness  অর্থাৎ অন্ধকার স্থানে কম দেখতে পাওয়া জনিত সমস্যা দেখা যায়।
এই ধরনের সমস্যা শিশুদের ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায়। শিশুদের যখন স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে তখন ভিটামিন-এ পর্যাপ্ত পরিমাণের শরীরে প্রবেশ না করলে এই ধরনের সমস্যা দেখা যেতে পারে।

ভিটামিন এ এর অভাব জনিত পরবর্তী লক্ষণ টি হল Infertility অর্থাৎ গর্ভধারণের সমস্যা। পুরুষ এবং স্ত্রী দুজনেরই প্রজননতন্ত্র অর্থাৎ Reproductive System-র স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন এ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন এ যদি শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণের না থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে কিন্তু প্রজনন তন্ত্রের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়।

শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন এ খুবই গুরুত্বপূর্ণ হাড় তথা পেশীতন্ত্র- এর গঠনের জন্য ভিটামিন এ খুবই জরুরি।

বিভিন্ন ধরনের অধ্যয়ন অনুসারে আমরা জানতে পারি, যে সমস্ত শিশুর শরীরে ভিটামিন এর অভাব আছে তাদের বৃদ্ধি স্বাভাবিক শিশুদের তুলনায় অনেক কম হয়। সুতরাং ভিটামিন এ এর অভাবে শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি  ব্যাহত হতে পারে।

ভিটামিন এ এর অভাব জনিত পরবর্তী লক্ষণ টি হল  Throat and chest infection অর্থাৎ গলা এবং বুকে সংক্রমণ হতে পারে সেই শিশুদের যাদের দেহে ভিটামিন এ এর অভাব দেখা যায়।

বিভিন্ন রকম অধ্যায়নে দেখা গেছে যে সমস্ত শিশুরা গলা এবং বুকের সংক্রমণে ভুগতে থাকে তারা যখন পরবর্তীকালে ভিটামিন-এ এর সাপ্লিমেন্ট পাচ্ছে তাদের কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেই গলা এবং বুক সংক্রমণ অনেকটাই কমে গেছে।

ভিটামিন এ এর অভাব জনিত পরবর্তী লক্ষণ টি হল Delayed wound healing অর্থাৎ শরীরের কোনো স্থান যদি কেটে যায় বা অস্ত্রোপচার পরে যদি সেই অংশটি শুকোতে সময় নেয় সেক্ষেত্রে তার একটি কারণ হতে পারে ভিটামিন এ এর অভাব। স্বাভাবিক কোনো স্থানে ক্ষত নিরাময়ের জন্য আমাদের শরীরে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রোটিন থাকে সেটি হল কোলাজেন। এই কোলাজেনের গঠনের জন্য ভিটামিন-সি যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনই ভিটামিন- এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সুতরাং যদি কোনো ব্যক্তির শরীরে ভিটামিন-এ এর পরিমাণ কম থাকে তাহলে সেই ব্যক্তির কোনো ক্ষত স্থান শুকোতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সময় লাগে।

ভিটামিন এ এর অভাব জনিত পরবর্তী লক্ষণ টি হল  Pimples বা ব্রণ অর্থাৎ যে সমস্ত ব্যক্তিদের শরীরে ভিটামিন-এ এর পরিমাণ কম থাকে তাদের ব্রণ সমস্যা দেখা যায় তাই Pimples বা ব্রণ-র চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভিটামিন এ এর সাপ্লিমেন্ট অনেক সময় ব্যবহার করা হয়।

Post a Comment

0 Comments